ইন্টারনেটের ভাষা-পরিস্থিতি সম্পর্কিত সর্বপ্রথম প্রতিবেদনে আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই

আজকের দিনে ইন্টারনেট এবং এর বিভিন্ন ডিজিটাল স্পেস জ্ঞান, যোগাযোগ এবং কাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রদান করে। তবুও, সমগ্র বিশ্বের ৭০০০-এরও বেশি ভাষার (কথ্য ও সংকেত-ভাষা সহ) কতগুলিকে আমরা অনলাইনে পরিপূর্ণরূপে ব্যবহার করতে পারি?

আমরা তিনটি সংস্থার একটি সম্মিলিত উদ্যোগ– হুজ নলেজ?, দ্য অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউট, এবং দ্য সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটি (ভারত) –একইসঙ্গে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, যারা উপরের প্রশ্নটির উত্তর দিতে চেষ্টা করছেন, এবং ইন্টারনেটের ভাষাপরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন, তারাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত।

অনলাইনে ভাষার প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হচ্ছে তার একটা নকশা তৈরি করা, ইন্টারনেটকে আরও বহুভাষিক করে তোলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, এবং কর্মসূচীর একটি রূপরেখা গড়ে তোলার কাজ করছে এই প্রতিবেদন। আমরা চাই বিভিন্ন প্রজন্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ এই কাজে আমাদের সঙ্গী হোন, সেইসঙ্গে আশা করি বর্তমান প্রতিবেদনটি এই বিষয়ে পরবর্তী গবেষণা ও কাজের সূত্রপাত ঘটাবে।

সারসংক্ষেপ

আমরা এই প্রতিবেদনকে বলছি “ডিজিটাল ফার্স্ট”। এটি পড়ার, শোনার, এবং এর থেকে শেখার সেরা উপায় হল এই ওয়েবসাইট, কারণ এই প্রতিবেদনের কয়েকটি স্তর ও ধাপ রয়েছে। আমরা পরিসংখ্যান ও বিবরণকে একত্রিত করেছি। পরিসংখ্যান সংখ্যাতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদানের মাধ্যমে অনলাইনে ভাষাপরিস্থিতির একটা সামগ্রিক ধারণা দেয়, অপরপক্ষে বিবরণের মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি মানুষজনের পক্ষে তাদের নিজেদের ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারা কতটা সহজ বা কঠিন।

এই সারসংক্ষেপে আমরা জ্ঞানের ভৌগোলিক ও ডিজিটাল অসাম্য খতিয়ে দেখার পাশাপাশি অনলাইনে ভাষা ব্যবহার ও কনটেন্ট-এর বিষয়টিও দেখেছি। আমরা ক্ষমতার বহুমুখীনতা পর্যালোচনা করেছি, এবং এর মধ্য দিয়ে বহুভাষিক ইন্টারনেট এবং কীভাবে আমরা তা আরো উন্নত করতে পারি -এ সম্পর্কে যা আমরা জেনেছি তার একটা রূপরেখা তৈরি করেছি। সেইসঙ্গে এ-বিষয়ে কীভাবে আরো এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে সেসম্পর্কে আভাসও দিয়েছি।

কথা ও কাহিনি

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা কেমন, এই অংশ সে বিষয়ে গভীরতর উপলব্ধি প্রদান করে। ওয়েবে আমাদের অধিগম্যতা কতটা অর্থপূর্ণ ও পক্ষপাতশূন্য? অনলাইনে জনসাধারণের জন্য যে জ্ঞানসম্ভার তা আমরা যে হারে ব্যবহার করি, সেই হারে কি তৈরি করতে পারি?

আমরা লেখা ও কথার আকারে এইসমস্ত বিবরণগুলি আহ্বান করেছিলাম, যার মধ্যে আছে লিখিত প্রবন্ধ, অডিয়ো এবং ভিডিও সাক্ষাৎকার। এই অংশে আপনারা আদি ভাষাগুলির ব্যাপারে তথ্য পাবেন, যার মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার চিন্দালি, ক্রি, ওজিবওয়ে, মাপুজুগুন, জাপোটেক এবং আর্রেন্টে। এখানে আপনারা ইউরোপের সংখ্যালঘু ভাষা, যথা ব্রেটন, ব্যাস্ক, সার্ডিনিয়ান ও ক্যারেলিয়ান বিষয়ে যেমন জানতে পারবেন, তেমনই এশিয়ার স্থানীয় ও বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী ভাষা বাংলা, ইন্দোনেশীয় (বাহাসা ইন্দোনেশিয়া) ও সিংহলি বিষয়েও জানতে পারবেন। সেইসঙ্গে রয়েছে উত্তর আফ্রিকা জুড়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের আরবি ভাষাও।

পরিসংখ্যান

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় অ্যাপ, যন্ত্রাদি, ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উঠে আসা ভাষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি পরিসংখ্যানের মাধ্যমে এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে আপনারা পাবেন তথ্যের দৃশ্যায়ণ, এছাড়াও পাবেন জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ তথ্যাদি ও বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা বিশ্লেষণ। আমরা ১১টি ওয়েবসাইট, ১২টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ও ১৬টি আই-ও-এস অ্যাপে ব্যবহৃত ভাষা বিশ্লেষণ করেছি। এই বিশ্লেষণে প্ল্যাটফর্মগুলিকে মূলতঃ চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে: জ্ঞানের অধিগম্যতা, ভাষা শিক্ষণ, সমাজমাধ্যম এবং ব্যক্তিগত ও দলগত বার্তা আদান-প্রদান। বিশেষ করে গুগল ম্যাপ এবং উইকিপিডিয়া -এইদুটি প্ল্যাটফর্মকে আমরা ব্যাপক ও বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেছি।

এই অংশে ফলাফল এবং পরবর্তী গবেষণার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত সুবিধা-অসুবিধাগুলিও বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।